শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭ অপরাহ্ন
ভিশন বাংলা ডেস্ক: অবিভক্ত বাংলার যশোর জেলার মাগুরা থেকে যাত্রা শুরু করে কলকাতার রানীকুঠিতে পরিসমাপ্তি, এই দীর্ঘ যাত্রাপথের আনন্দগানে নিমাই ভট্টাচার্যকে কখনো পরিশ্রান্ত পথিক বলে একটিবারও বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের কাছে মনে হয়নি। দেশভাগের যন্ত্রণা এবং ক্লিন্নতাকে একমাত্র উপজীব্য করে, সেই বেদনার কথোপকথনকেই তিনি একমাত্র সাহিত্য উপাদানের মর্মবস্তু বলেও একটিবারের জন্য নিজের সৃষ্টিতে উপস্থাপিত করেননি। সমকালীন দুনিয়ায় মানবতার সংকট এবং সেই সংকট অতিক্রম করার জন্য মানুষের যে সংগ্রাম—এটাই ছিল বহুধাবিস্তৃত নিমাই ভট্টাচার্যের সৃষ্টির সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য। তার সৃষ্ট চরিত্রগুলোর সব থেকে বড় চারিত্রিক লক্ষণ। এই জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য’র আজ প্রয়াণ দিবস। ২০২০ সালের ২৫ জুন কলকাতার টালিগঞ্জে নিজ বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান এই জনপ্রিয় সাহিত্যিক। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
একাধারে প্রখ্যাত সাংবাদিক, অন্যদিকে খ্যাতিমান লেখক। সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিমাই ভট্টাচার্য রচনা করেছেন অন্তত তিন ডজন বই। তার লেখা বইগুলো নানাভাবে সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়। তবে তাকে মনে রাখার জন্য একটি মাত্র বই-ই যথেষ্ট। সেটি ‘মেমসাহেব’। এই ‘মেমসাহেব’র জন্যই বাংলার তরুণ সমাজের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন ‘রিপোর্টার’ নিমাই ভট্টাচার্য। তার জন্ম ১৯৩১ সালে। নিমাই ভট্টাচার্য ভারতে জন্মগ্রহণ করলেও তার আদিনিবাস বাংলাদেশের যশোরে। যশোরের সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনে ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়েছেন তিনি। তারপর ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় চলে যান কলকাতা। পেশাগত জীবন শুরু হয় সাংবাদিকতা দিয়ে। তার প্রথম উপন্যাস ছাপা হয় অমৃত পত্রিকায় ১৯৬৩ সালে। উপন্যাসটি পাঠকপ্রিয় হয়। ১৯৬৮ সালে প্রকাশ পায় ‘মেমসাহেব’ উপন্যাস। তার প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা ১৫০টিরও বেশি। তার জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মেমসাহেব’ চলচ্চিত্রে রূপ পায় ১৯৭২ সালে। তাতে কেন্দ্রীয় বাচ্চু চরিত্রে অভিনয় করেন উত্তম কুমার। এছাড়া, অভিনয় করেছিলেন মেমসাহেব হিসেবে অপর্ণা সেন। এরপর তার অনেক উপন্যাসের চিত্রায়ণ হয়েছে। অমৃত পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ‘রাজধানীর নেপথ্যে’ ছাপা হওয়ার পর লিখেছেন ‘রিপোর্টার’, ‘পার্লামেন্ট স্ট্রিট’, ‘ডিপ্লোম্যাট’, ‘মিনিবাস’, ‘মাতাল’, ‘ইনকিলাব’, ‘ব্যাচেলর’, ‘কেরানি’, ‘ডার্লিং’, ‘নাচনি’, ‘প্রিয়বরেষু’, ‘পিকাডিলী সার্কাস’, ‘কয়েদী’, ‘জংশন’, প্রবেশ নিষেধ, ‘ম্যাডাম’, ‘ককটেল’, ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’, ‘অ্যাংলো ইন্ডিয়ান’ ইত্যাদি উপন্যাস। জীবদ্দশায় সাহিত্য কর্মের জন্য অসংখ্য স্বীকৃতি পেয়েছেন বরেণ্য এই কথাসাহিত্যিক। ১৯৫০ সালে ‘লোকসেবক’ পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতা জীবনের শুরু নিমাই ভট্টাচার্যের। তারপর দিল্লিতে গিয়ে বেশ কয়েকটি কাগজের সংসদ, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৫০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ৩০ বছরের সাংবাদিকতা জীবনের বড় সময়টা কাটিয়েছেন দিল্লিতে। কাজ করেছেন পাঁচটি কাগজে। বেশিরভাগই সর্বভারতীয় সংবাদপত্র। দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে জওহরলাল নেহরু, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, ভি কে কৃষ্ণমেনন, মোরারজী দেশাই, ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের স্নেহভাজন ছিলেন নিমাই ভট্টাচার্য। সাংবাদিকতা থেকে অবসর নেয়ার পর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় কলম লিখতেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়েও অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল নিমাই ভট্টাচার্যের।